বিএমডিএ’র নির্বাহী পরিচালকের জামিন মঞ্জুর, ২১ আগস্ট অভিযোগ গঠনের শুনানী

বিএমডিএ’র নির্বাহী পরিচালকের জামিন মঞ্জুর, ২১ আগস্ট অভিযোগ গঠনের শুনানী

নিজস্ব প্রতিবেদক: বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক মোঃ আব্দুর রশিদের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। ১০ হাজার টাকা বেলবন্ডের বিনিময়ে তার জামিন মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের জন্য আগামী ২১ আগস্ট শুনানীর দিন ধার্য্য করেছেন আদালত।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান (জেলা ও দায়রা জজ) নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর এই আদেশ দিয়েছেন। আদালত সূত্রে জানা গেছে, শ্রমিক-কর্মচারীদের ৮ দফা দাবি না মানায় এবং এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় রেজিস্টার অব ট্রেড ইউনিয়ন্স বিভাগীয় শ্রম অধিদফতর রাজশাহীর পরিচালক বাদী হয়ে বিএমডিএ’র ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের করেছেন।

বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ২১০ (৭)/৩০১ ধারার অপরাধের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলাটি দায়েরের পর আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছিলেন আদালত। সমন অনুযায়ী মঙ্গলবার আসামিকে স্বয়ং অথবা আইনজীবীর মাধ্যমে রাজশাহী শ্রম আদালতের চেয়ারম্যানের (জেলা ও দায়রা জজ) সামনে হাজির হওয়ার দিন ধার্য ছিল।

এদিন আদালতে হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিন আবেদন করেন বিএমডিএ’র ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশিদ। শুনানী শেষে আদালতের বিচারক ১০ হাজার টাকা বেলব-ের বিনিময়ে তার জামিন মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে বিএমডিএ’র ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের জন্য আগামী ২১ আগস্ট শুনানীর দিন ধার্য্য করেন আদালত।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৭ মার্চ বিএমডিএ’র শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে ‘বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্মচারী লীগ’কে (রেজি: নং- রাজ-৩০৪২) সিবিএ নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে শ্রমিক-কর্মচারীদের নায্য দাবি বাস্তবায়নের জন্য সংগঠনটির পক্ষ থেকে চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আসামি (ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক) বরাবর আটটি দাবি সম্বলিত বেশ কয়েকটি দরখাস্ত প্রদান করা হয়।

আসামি পক্ষ হতে সিবিএ কর্তৃক প্রেরিত প্রত্যেকটি দরখাস্ত গ্রহণ করা হয়। কিন্তু এসব দরখাস্তে উল্লেখিত দাবিসমূহ বাস্তবায়নে আসামি পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি এসব বিষয়ে সিবিএ’র সাথে কোনো আলোচনাও করা হয়নি। তাই এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে দাবিসমূহ বাস্তবায়নের জন্য শ্রম আইন অনুযায়ী নির্বাচিত সিবিএ’র পক্ষ থেকে ৫ মার্চ মামলার বাদী রেজিস্টার অব ট্রেড ইউনিয়ন্স বিভাগীয় শ্রম অধিদফতর রাজশাহীর পরিচালক বরাবর আবেদন করা হয়। এতে আরো উল্লেখ করা হয়, সিবিএ’র পক্ষ থেকে এই আবেদন প্রাপ্তির পর বাদী বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষে রেজিস্টার অব ট্রেড ইউনিয়ন্স বিভাগীয় শ্রম অধিদফতর রাজশাহীর সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমানকে দায়িত্ব প্রদান করেন। পরে সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান শ্রম আইন ২০০৬ এর ২১০ (৬) ধারা অনুযায়ী ত্রি-পক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের জন্য সালিশী কার্যক্রম শুরু করেন। সে অনুযায়ী চার দফা সালিশী বৈঠকে উভয়পক্ষকে (আসামি ও সিবিএ) উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।

এসব সালিশী বৈঠকে সিবিএ’র পক্ষ থেকে প্রতিনিধি উপস্থিত থাকলেও আসামি পক্ষ ছিলেন অনুপস্থিত। তাছাড়া আসামি পক্ষ এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপও গ্রহণ করেননি। যা বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ ধারা ২১০ (৭) এর লংঘন এবং একই আইনে ধারা ৩০১ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (অদ্যাবধি সংশোধিত) এর ২১০ এর (৭) ধারা লংঘন করে শ্রম আইন, ২০০৬ সংশোধিত এর ৩০১ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

এরই প্রেক্ষিতে মামলার বাদী ন্যায় বিচারের স্বার্থে বিষয়টি আমলে নিয়ে আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারিরও আদেশ চেয়েছিলেন আদালতে। বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্মচারী লীগের সভাপতি মেসবাউল হক বলেন, বিএমডিএ’র ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক মোঃ আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের হওয়ার পর থেকে কর্মচারীদের চাকরিচ্যুতি ও শাস্তিমূলক বদলীসহ ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে।

এই অভিযোগে গত ২০ জুন ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক মোঃ আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে রেজিস্টার অব ট্রেড ইউনিয়ন্স বিভাগীয় শ্রম অধিদফতর রাজশাহীর পরিচালক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে মেসবাউল হক বলেন, কর্মচারীদের আট দফা দাবি বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষ কোনো প্রকার পদক্ষেপই নিচ্ছেন না। বরং উল্টো কর্মচারীদের চাপ ও ভীতির মধ্যে রাখা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএমডিএ’র ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক মোঃ আব্দুর রশিদ বলেন, আপনারা সাংবাদিকরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাই না। তবে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কর্মচারীদের হুমকি দেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। তাছাড়া এ বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টিও জানা নেই। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার সমর্থিত কোনো লোক নেই। সবাই আমার লোক।

মতিহার বার্তা ডট কম-০৩ জুলাই  ২০১৯

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply